‘মধু’ হল মহান সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত প্রাকৃতিক এ্যান্টিবায়োটিক। মৌমাছির দ্বারা তৈরি মৌচাকের খাঁটি মধু খুবই মূল্যবান এবং এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।
– মধু খাওয়ার সবচেয়ে উত্তম নিয়ম হলো প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১-২ চা-চামচ মধু খাওয়া। অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে গরম দুধের সাথে মধু মিশিয়ে পান করা।
Raw Honey এবং Processing Honey কাকে বলে?
মৌমাছি নিজে যে মধু তৈরি করে মৌচাকে জমা করে, সেই মধুই হচ্ছে কাঁচা মধু বা Raw হানি’। সেটা গ্রাম গঞ্জের হতে চাক কাটা মধু হোক বা বাক্সের ভেতরে পোষা মৌমাছি দিয়ে উৎপাদিত মধু হোক। এই দুই প্রকার মৌ-মাছিই যদি ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে, তাহলে এই দুই প্রকার মধুই ভালো মধু, খাঁটি মধু। বাজারে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ মধু প্রক্রিয়াজাত মধু বা Processing Honey। কাঁচা মধু এবং প্রক্রিয়াজাত মধু , এই দুই মধুর মধ্যে স্পষ্ট অনেক পার্থক্য রয়েছে।
- Raw Honey:
উৎপাদন প্রক্রিয়াঃ শুধুমাত্র ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে বোতলজাত করা হয়।
পুষ্টিগুণঃ প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান, এনজাইম, পরাগরেণু ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট অক্ষুণ্ণ থাকে।
গঠনঃ কাঁচা মধু সাধারণত ঘোলাটে, হালকা ঘন হয় এবং সময়ের সাথে সাথে স্ফটিকাকারে কারণে দানাদার দেখা যাবে, যা এর বিশুদ্ধতার একটি লক্ষণ।
স্বাদ ও গন্ধঃ এর স্বাদ ও গন্ধ ফুলের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়। এটি প্রসেস মধুর চেয়ে বেশি সমৃদ্ধ। - Processing Honey:
উৎপাদন প্রক্রিয়াঃতাপ প্রয়োগ (পাস্তুরাইজেশন) ও সূক্ষ্ম ফিল্টারেশন করা হয়।
পুষ্টিগুণঃ তাপের কারণে বেশিরভাগ পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয়ে যায়।
স্বাদ ও গঠনঃ বেশি স্বচ্ছ, তরল এবং দানাদার হয় না। সাধারণত হালকা ও সাধারণ মিষ্টি।
আমাদের আসল ফুডের মধু কেন সেরা?
- লিচুর মৌসুমে যখন বড় বড় লিচু বাগানে প্রচুর পরিমাণে লিচু ফুল ফুটতে শুরু করে, তখন লিচুর বাগানে মৌ-বক্স স্থাপন করা হয়। সেই মৌ-বক্স থেকে মৌমাছি গুলো উড়ে গিয়ে লিচু ফুল থেকে নেকটার সংগ্রহ করে মৌ-বক্সের চাকে ফিরে আসে এবং মৌ বক্সের ভিতরেই মৌমাছিরা মধু উৎপন্ন করে থাকে।
- এরপর লিচু বাগানের মৌ-বক্সের চাক থেকে লিচু মধু সংগ্রহ করে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নেওয়া হয়, কোনো ধরনের কৃত্রিম ও রাসায়নিক কিছু মেশানো ছাড়া, তাই এই লিচু ফুলের মধু শতভাগ বিশুদ্ধ ও খাঁটি।
- আমাদের মধু নিজস্ব মৌয়াল দ্বারা স্বাস্থ্যকর উপায়ে সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াজাত করা হয়। তাই আপনি এবং আপনার পরিবার নিরাপদে আমাদের মধু খেতে পারেন।
- খাঁটি মধু হল উচ্চ চাহিদা সম্পন্ন এবং আসল ফুডের খাদ্য আইটেমগুলির মধ্যে একটি, যা আপনাকে সর্বোচ্চ গুণগতমান এবং বিশুদ্ধতার নিশ্চয়তা প্রদান করে।
আসল ও ভেজাল মধু চেনার উপায়ঃ
- খাঁটি মধু সাধারণত কিছুটা ঘন হয়, তবে ফুলের প্রকারভেদে এর ঘনত্ব আলাদা হতে পারে। যেমন, সুন্দরবনের প্রকৃতিক মধু সাধারণত পাতলা হয়ে থাকে। তাছাড়া বৃষ্টির মৌসুমে মধু অল্প পাতলা হতে পারে।
- খাঁটি মধুর গন্ধ মিষ্টি ও আকর্ষণীয় হয়, এতে কোনো কটু গন্ধ থাকে না। এর স্বাদও মিষ্টি হয় এবং কোনো ঝাঁঝালো ভাব থাকে না।
- খাঁটি মধু বোতল ঝাঁকুনি দিলে হালকা সাদা ফেনা বা বুদবুদের মতো দেখা যেতে পারে। এটি খাঁটি মধু চেনার একটি চিহ্ন।
- নকল মধু সারা বছর সব মৌসুমে মধুর স্বাদ ও ঘ্রাণ প্রায় একই থাকে যা খাঁঁটি মধুর ক্ষেত্রে হয় না।
- বৈজ্ঞানিক পরীক্ষারা দ্বারা নিশ্চিত হওয়া যায় এবং এতে পোলেনের উপস্থিতি পাওয়া যায় না।
খাঁটি মধুর বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতাঃ
- পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ: প্রাকৃতিক মধুতে প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইনো অ্যাসিড, খনিজ লবণ (ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম), বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন (B1, B2, B3, B5, B6, C, A, E) এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণাবলী শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- হজম সহায়ক: এটি হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং গ্যাস্ট্রিক ও অম্বলের মতো পেটের সমস্যা কমাতে সহায়ক।
- ঠান্ডা-কাশির উপশম: সর্দি, কাশি এবং গলা ব্যথার জন্য এটি একটি কার্যকর প্রাকৃতিক ঔষধ।
- শক্তি বৃদ্ধি: এটি শরীরের জন্য একটি প্রাকৃতিক শক্তির উৎস, যা শরীরকে কর্মক্ষম রাখে।
- অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি: মধু এবং মৌচাকের মোম উভয়ই প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য: এতে থাকা পলিফেনল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক।
খাঁটি মধু চেনার কিছু পরীক্ষা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণাঃ
- অনেকে পানিতে এক ফোঁটা মধু দিয়ে পরীক্ষা করেন। মূলত মধুর আপেক্ষিক গুরুত্ব পানি অপেক্ষা বেশি থাকায় এটি পানির নিচে জমা হয়ই। কিন্তু অনেকের ধারণা মধু পানিতে ঢাললে যদি সটান নিচে চলে না যায় তবে সেই মধু খাঁটি নয়। কিন্তু মধু কীভাবে নিচে জমা হবে তা নির্ভর করে এর ময়েশ্চারের উপর। সাধারণত সুন্দরবনের প্রাকৃতিক মধুতে ময়েশ্চার বেশি থাকায় এটি পানিতে দিলে একটি বিক্ষিপ্ত হয়ে এরপর তলানিতে গিয়ে জমা হয়।
- নখের উপর রাখলে গড়িয়ে পরে কি না সেইটার ভিত্তিতেও অনেকে পরীক্ষা করে থাকেন। এক্ষেত্রেও মধুর ময়েশ্চারের উপর নির্ভর করে। মধুর ময়েশ্চার বেশি ও ঘনত্ব কম হলে গড়িয়ে পরবে। এর মাধ্যমে আসল বা নকল চিহ্নিত করা যায় না।
- আগুন জ্বালিয়ে মধুর বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। কিন্তু আসল মধু ও নকল মধু উভয়ই আগুনে জ্বলে।
- খাঁটি মধু জমে যাবে না– এমন একটি ধারনা প্রচলিত আছে যা মূলত ভুল ধারণা। বরং মধু জমে যাওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। একে মধুর স্ফটিকাকায়ন বলা হয়। তবে বেশিরভাগ সময় দেখা যায় মধুতে সরিষা ফুলের নেকটার উপস্থিত থাকে সেই মধু জমে যায় এর ফলে মধুর স্বাদ গন্ধে কোনরূপ পরিবর্তন আসে না।
- মধুতে পিঁপড়া উঠবে না – এমন এক ধরনের কথা প্রচলিত আছে। কিন্তু খাঁটি মধুতেও পিঁপড়া উঠে।

